'ধর্মের সন্ধানে'' (In Search of Religion)
লেখকঃ নীল
সম্পাদনা
জিয়ানুর
রহমান
পর্ব-১৯ বিয়ে যদি দাসত্ব হয়, অবাধ সেক্স কি তাহলে স্বাধীনতা?
বিয়ে যদি দাসত্ব হয়, অবাধ সেক্স কি তাহলে স্বাধীনতা? কথা হচ্ছিল আমাদের মহল্লার কথিত নারীবাদী এবং সমাজ সেবিকা মৌমিতা আন্টির সাথে। উনার ভাষ্য মতে বিবাহ হচ্ছে একটি সামাজিক কুসংস্কার, যা নারীদের পুরুষের দাসত্ব করার জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম। উনি এই সামাজিক কুসংস্কার ভেঙে দিয়ে নারীদের এই বিয়ে নামক দাসত্ব থেকে মুক্তি দিতে চায় । আমি উনার কথা গুলি খুবই মনযোগ সহকারে শুনছিলাম, কারন এই রকম মানুষের মগজ ধোলাই কথা আমাকে খুবই আনন্দ দেয়। হঠাৎ করে মৌমিতা আন্টিকে থামিয়ে জিজ্ঞেসা করে বসলাম, আচ্ছা মৌমিতা আন্টি বিয়ে ছাড়া দুজন মানুষের ফিজিকাল রিলেশন তুমি কিভাবে দেখবে? তখন মৌমিতা আন্টি বলে উঠলো দুজন মানুষের শারীরিক সম্পর্ক রাখতে আমার মনে হয় না কোন বিয়ের প্রয়োজন হবে, কারন বিয়ে হচ্ছে একটা চুক্তি,যে চুক্তির মাধ্যমে একটা পুরুষ একটা নারীকে দাসত্বে পরিণত করে, যে চুক্তির মাধ্যমে একটা নারী একটা পুরুষের কাছে তার সারাজীবনের স্বপ্ন, স্বাধীনতাকে বিসর্জন দেয়, তাই আমি মনে করি না,কোন মানুষের শারীরিক সম্পর্কে জড়াতে কোন রকমের চুক্তির প্রয়োজন হবে। এক্ষেত্রে আমি যেটা বেশি প্রাধান্য দেবো সেটি হচ্ছে দুজন মানুষের মনের মিল এবং দুজন মানুষের ইচ্ছা শক্তি, দুজন মানুষের শারীরিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে মনের ইচ্ছেটাই যথেষ্ট, কোন চুক্তি না। আমি তখন মৌমিতা আন্টিকে বললাম, আচ্ছা মৌমিতা আন্টি কোন রকম চুক্তি ছাড়া কি এই ভালোবাসা টিকিয়ে রাখা সম্ভব হবে? তুমি যেমন এই চুক্তিকে নারীদের জন্য ঝুঁকি মনে কর, ঠিক আমি তেমন এই চুক্তি নারীদের জন্য একমাত্র সুরক্ষা মনে করি। শুধু মাত্র চুক্তির মাধ্যমে যে নারী সুরক্ষা পাচ্ছে তা নই, সুরক্ষা পাচ্ছে তাদের ভালোবাসার জন্ম নেওয়া শিশুটি, সুরক্ষা পাবে একটা পরিবার। মৌমিতা আন্টি তখন বলে উঠলো তোর এই সুরক্ষার কথা আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। আমি তখন বললাম, আচ্ছা এই চুক্তি ছাড়া দুজন মানুষের ভালোবাসা কিভাবে টিকিয়ে রাখবে? মৌমিতা আন্টি তখন বলল, কেন দুজন মানুষের মনের মিল থেকে। আমি বললাম, যখন দুজন মানুষের মধ্যে অমিল দেখা দিবে তখন? তখন মৌমিতা আন্টি বলল, যখন অমিল দেখা দিবে তখন দুজন মানুষের আলাদা আলাদা রাস্তা দেখবে, যেভাবে বৈবাহিক জীবনে হয়ে থাকে। আমি তখন বলে উঠলাম বৈবাহিক জীবনে একটা নারী পুরুষের বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও একটা নারী তার প্রাপ্য সম্মান টুকু বুঝে পাচ্ছে , শুধু যে নারী পাচ্ছে তা নয় তাদের ভালোবাসা থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি ও তার পরিচয় পাচ্ছে, কিন্তু এদিকে দেখো বিবাহ ছাড়া যে সমস্ত সম্পর্ক গুলি গড়ে উঠছে তার পরিস্থিতি হচ্ছে খুবই ভয়াবহ, নারী প্রতারনার স্বীকার হচ্ছে, নারীরা পুরুষের নামে কোর্টে যেয়ে ধর্ষন মামলা করছে, অবশেষে তাদের ভালোবাসা থেকে সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানের আশ্রয় হচ্ছে হয়তো কোন ম্যানহলে কিংবা কোন দূর্গন্ধ নর্দমার ড্রেনে, নয়তো কোন হিংস্র কুকুর কিংবা শিয়ালের মুখে। সত্যিই কি বিবাহ ছাড়া কোন সম্পর্ক কোন নারী কিংবা কোন শিশুকে সুরক্ষিত করতে পেরেছে? মৌমিতা আন্টি তখন উত্তর দিল, হয়তো সামাজিক ভাবে কিছু সমস্যার সম্মুখীন হবে, কিন্তু বিয়ে নামক কারাগার থেকে নারী চিরতরে মুক্তি পাবে এবং তার স্বাধীনতা মিলবে, প্রতিদিন খবরের কাগজের ভাজ খুললেই দেখি নারী কোথাও না কোথাও নির্যাতনের স্বীকার হচ্ছে, বাল্য বিবাহ হচ্ছে, যৌতুকের জন্য স্ত্রী কে মারধর করছে, তুই এইসব সহ্য করতে পারিস, কিন্তু আমি একজন নারী হয়ে এসব সহ্য করতে পারি না, এখন আমাদের সময় হয়েছে নিজেদের অধিকার ফিরে পাবার, পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ভেঙে নর-নারীর সম অধিকার নিশ্চিত করার। আমি তখন বললাম যারা এসব করছে তারা অন্যায় করছে, তুমি সেই সবের প্রতিবাদ করতে পার, তুমি সেই সবের বিরুদ্ধে নারীকে সোচ্চার করতে পার, তাই বলে তুমি গোটা বিবাহ প্রথার বিরোধিতা করতে পার না, নারী নির্যাতনের জন্য যদি তুমি বিবাহ প্রথাকে বিলুপ্ত করে দিতে চাও তাহলে যে সন্তান গুলি পিতামাতার কোলে আশ্রয় না হয়ে কোন এক ম্যানহলে আশ্রয় হচ্ছে তাহলে কি সেই সব সন্তান গুলিও সমাজ থেকে পিতামাতা বিলুপ্ত করে দিতে চাইবে? এখানে যেমন নিজের সদ্য জাত সন্তান ম্যানহলে ফেলে দেওয়া অন্যায় ঠিক তেমন ভাবে নারী নির্যাতন করাটাও অন্যায়, আমরা প্রতিবাদ করতে পারি এই অন্যয়ের বিরুদ্ধে তাই বলে গোটা সিস্টেমের বিরুদ্ধে নয়, তাই তোমাকে বিশেষ ভাবে অনুরোধ করছি নারীবাদের নাম করে গোটা সমাজ কিংবা পরিবারকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না, কারণ একটি বিয়ে শুধু দুজন মানুষের শারীরিক চাহিদা পূরণ করে না একটি সমাজ এবং একটি পরিবার গঠনও করে থাকে।
বাজার দামঃ ৫০ টাকা
বইটি পেতে
0 Comments
Thanks for your comment.